মানুষ অসুস্থ হ’লে অনেক সময় ভেঙ্গে পড়ে। এমনকি অনেকে পানাহার ছেড়ে দেয়; নিজের তাক্বদীরের প্রতি দোষারোপ করে। কিন্তু এগুলি কোন মুমিনের কাজ নয়। বরং এ অবস্থায় ধৈর্যধারণ করে আরোগ্যের জন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ করা এবং সাধ্যমত চিকিৎসা করানো কর্তব্য। এ প্রবন্ধে রোগীর করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হ’ল।-
১. রোগের ব্যাপারে বিশুদ্ধ আক্বীদা লালন করা :
একজন রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হ’ল রোগের ব্যাপারে সঠিক আক্বীদা পোষণ করা। রোগের ব্যাপারে কাউকে দোষারোপ না করা। মনে সর্বদা এই বিশ্বাস রাখা যে, রোগ দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ এবং সুস্থতা দানের মালিকও তিনিই। আল্লাহর হুকুম ব্যতীত কোন ঔষধ ও ডাক্তার রোগীকে সুস্থ করে তোলার ক্ষমতা রাখেন না। কোন ব্যক্তি বা বস্ত্তও কাউকে রোগাক্রান্ত করতে পারে না, সুস্থও করতে পারে না। রোগের নিজস্ব কোন শক্তি নেই। এমনকি সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগও আল্লাহর হুকুম ছাড়া সংক্রমিত হ’তে পারে না। আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَا عَدْوَى وَلَا صَفَرَ وَلَا هَامَةَ ‘ছোঁয়াছে রোগ বা রোগের সংক্রমণ বলতে কিছু নেই, সফর মাসে কোন কুলক্ষণ নেই এবং পেঁচার মধ্যেও কোন কুলক্ষণ নেই’। তখন জনৈক বেদুঈন জিজ্ঞেস করল,يَا رَسُولَ اللهِ فَمَا بَالُ الْإِبِلِ تَكُونُ فِي الرَّمْلِ كَأَنَّهَا الظِّبَاءُ، فَيَجِيءُ الْبَعِيرُ الْأَجْرَبُ فَيَدْخُلُ فِيهَا فَيُجْرِبُهَا كُلَّهَا؟ ‘হে আল্লাহর রাসূল! তাহ’লে সেই উটপালের অবস্থা কী, যা কোন বালুকাময় প্রান্তরে অবস্থান করে এবং হরিণের মতো সুস্থ-সবল থাকে। অতঃপর সেখানে কোন খুজলি-পাঁচড়ায় আক্রান্ত উট এসে পড়ে এবং সবগুলোকে ঐ রোগে আক্রান্ত করে ছাড়ে?’ (উত্তরে) তিনি বলেন, فَمَنْ أَعْدَى الْأَوَّلَ؟ ‘তাহ’লে প্রথম উটটিকে কে রোগাক্রান্ত করেছিল’?[1] অর্থাৎ যে মহান আল্লাহ প্রথম উটটিকে রোগাক্রান্ত করেছিলেন, তিনিই তো অন্যান্য উটকে আক্রান্ত করেছেন। তবে আল্লাহ কোন রোগে সংক্রমিত হওয়ার গুণ দিয়ে থাকলে তা সংক্রমিত হবে। তখন তা থেকে নিরাপদে থাকতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لاَ يُورِدَنَّ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ ‘কেউ যেন অবশ্যই অসুস্থ উটকে সুস্থ উটের সাথে না রাখে’।[2] অন্যত্র তিনি বলেন,وَفِرَّ مِنَ الـمَجْذُوْمِ كَمَا تَفِرُّ مِنَ الأَسَدِ ‘তুমি কুষ্ঠরোগী থেকে পলায়ন কর, যেমনভাবে তুমি সিংহ থেকে পলায়ন করে থাক’।[3] সুতরাং রোগীর কর্তব্য হ’ল রোগ সম্পর্কে স্বীয় আক্বীদা ঠিক রাখা। অন্যথা এই রোগের বিপদ তার ঈমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
২. রোগকে তাক্বদীরের একটি অংশ মনে করা :
ঈমানের দাবী হ’ল জীবনে নেমে আসা সুখ-দুঃখ, প্রশান্তি-মুছীবত সব কিছুকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত তাক্বদীরের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করা। তদ্রূপ আমাদের রোগ-শোকও তাক্বদীরের লিখন। আমরা ছোট-বড় যে রোগেই আক্রান্ত হই না কেন, তা আমাদের শুধু জন্মের পূর্বে নয়, রবং এই আকাশ-যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বছর আগে থেকে আমাদের তাক্বদীরে লিপিবদ্ধ ছিল। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, كَتَبَ اللهُ مَقَادِيرَ الْخَلَائِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِخَمْسِيْنَ أَلْفَ سَنَةٍ، ‘মহান আল্লাহ আকাশমন্ডলী ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বছর পূর্বে সৃষ্টিকুলের তাক্বদীর লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন’।[4]
মহান আল্লাহ বলেন,قُلْ لَنْ يُصِيبَنَا إِلَّا مَا كَتَبَ اللهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ، ‘তুমি বল, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত কিছুই আমাদের নিকটে পৌঁছবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহর উপরেই মুমিনদের ভরসা করা উচিত’ (তওবা ৯/৫১)। অন্যত্র তিনি বলেন, مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنْفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيرٌ، لِكَيْلَا تَأْسَوْا عَلَى مَا فَاتَكُمْ وَلَا تَفْرَحُوا بِمَا آتَاكُمْ وَاللهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ، ‘পৃথিবীতে বা তোমাদের জীবনে এমন কোন বিপদ আসে না, যা সৃষ্টির পূর্বে আমরা কিতাবে লিপিবদ্ধ করিনি। নিশ্চয়ই এটা আল্লাহর জন্য সহজ। যাতে তোমরা যা হারাও তাতে হতাশাগ্রস্ত না হও এবং যা তিনি তোমাদের দেন, তাতে আনন্দে আত্মহারা না হও। বস্তুতঃ আল্লাহ কোন উদ্ধত ও অহংকারীকে ভালবাসেন না’ (হাদীদ ৫৭/২২-২৩)।
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,وَمِنْ عِلَاجِهِ أَنْ يَعْلَمَ عِلْمَ الْيَقِينِ أَنَّ مَا أَصَابَهُ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَهُ، وَمَا أَخْطَأَهُ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبَهُ ‘আপতিত বিপদের কবল থেকে বাঁচার অন্যতম চিকিৎসা হচ্ছে, বান্দা এই দৃঢ় বিশ্বাস রাখবে, যে বিপদে সে আক্রান্ত হয়েছে, তা কখনই তাকে ছাড়ার ছিল না। আর যেই বিপদে সে পড়েনি, তা আদতে তার তাক্বদীরে লিপিবদ্ধই ছিল না।[5]
অপরদিকে শয়তান সর্বদা ‘যদি’ শব্দের মাধ্যমে মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয় এবং প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। যেমন কোন রোগী বলতে পারে, ‘আমি যদি এটা না করতাম, তাহ’লে আমার এই রোগটা হ’ত না, কিংবা আমি যদি সেটা করতাম, তাহ’লে আমি সুস্থ থাকতে পারতাম’। শয়তানের শেখানো এই কথাগুলোতে তাক্বদীরের প্রতি অবিশ্বাসের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যায়। তাই এই মর্মে দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে যে, জীবনের যাবতীয় রোগ-শোক সব কিছু আমাদের তাক্বদীরের লিখন। তাক্বদীরের প্রতি এই অবিচল বিশ্বাস রোগীর হৃদয়ে স্বস্তি ও সান্ত্বনার মৃদুমন্দ সমীরণ প্রবাহিত করে।
৩. রোগের কষ্টে ধৈর্যধারণ করা :
রোগীর অন্যতম করণীয় হ’ল রোগের কষ্টে ধৈর্যধারণ করা এবং আল্লাহর নিকটে নেকীর প্রত্যাশা করা। আল্লাহর সত্যনিষ্ঠ ও পরহেযগার বান্দাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হ’ল, রোগে-শোকে, বিপদাপদে সর্বাবস্থায় ধৈর্যধারণ করা। তাদের প্রশংসা করে আল্লাহ বলেন,وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ أُوْلَئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ، ‘এবং অভাবে, রোগ-পীড়ায় ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যের সাথে দৃঢ় থাকে। তারাই হ’ল সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই হ’ল প্রকৃত আল্লাহভীরু’ (বাক্বারাহ ২/১৭৭)। অন্যত্র তিনি বলেন,إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَاب، ‘নিঃসন্দেহে ধৈর্যশীলগণ তাদের পুরস্কার পাবে অপরিমিতভাবে’ (যুমার ৩৯/১০)।
প্রখ্যাত তাবেঈ আত্বা ইবনু আবী রাবাহ (রহঃ) বলেন, একদা আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) আমাকে বললেন,أَلاَ أُرِيكَ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ؟ ‘আমি কি তোমাকে একজন জান্নাতী মহিলা দেখাব না?’ আমি বললাম, অবশ্যই। তখন তিনি বললেন,
هَذِهِ الـمَرْأةُ السَّوْدَاءُ، أتَتِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقالت: إِنِّي أصْرَعُ، وَإِنِّي أتَكَشَّفُ، فَادْعُ اللهَ لِي، قال: إِنْ شِئْتِ صَبَرْتِ وَلَكِ الجَنَّةُ، وَإِنْ شِئْتِ دَعَوْتُ اللهَ أنْ يُعَافِيَكِ. فَقالت: أصْبِرُ فَقالت: إِنِّي أتَكَشَّفُ، فَادْعُ اللهَ لِي أنْ لا أتَكَشَّفَ، فَدَعَا لَهَا
‘এই কালো বর্ণের মহিলাটি। সে একবার নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকটে এসে বলল, আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত হই এবং আমার লজ্জাস্থান উন্মুক্ত হয়ে যায়। সুতরাং আপনি আমার (সুস্থতার) জন্য দো‘আ করুন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি চাইলে ধৈর্যধারণ করতে পার, তাহ’লে তোমার জন্য রয়েছে জান্নাত। আর যদি চাও, তাহ’লে আমি তোমার জন্য দো‘আ করব, যাতে আল্লাহ তোমাকে সুস্থতা দান করবেন। তখন মহিলাটি বলল, আমি ধৈর্যধারণ করব। সে বলল, কিন্তু ঐ অবস্থায় আমার লজ্জাস্থান খুলে যায়, কাজেই আল্লাহর নিকট দো‘আ করুন, যেন আমার লজ্জাস্থান খুলে না যায়। তখন রাসূল (ছাঃ) তার জন্য দো‘আ করলেন’।[6]
৪. রোগকে গালি না দেওয়া :
রোগকে অশুভ মনে করা এবং রোগকে গালি দেওয়া প্রকৃত মুমিনের পরিচয় নয়। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) রোগ-ব্যাধিকে গালি দিতে নিষেধ করেছেন। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উম্মুস সায়িব বা উম্মুল মুসাইয়িব (রাঃ)-কে দেখতে গিয়ে বললেন,مَا لَكِ؟ يَا أُمَّ السَّائِبِ أَوْ يَا أُمَّ الْمُسَيِّبِ تُزَفْزِفِينَ؟ ‘হে উম্মুস সায়িব বা উম্মুল মুসাইয়িব! তোমার কি হয়েছে, থরথর করে কাঁপছ কেন’? সে বলল, الْحُمَّى، لَا بَارَكَ اللهُ فِيهَا ‘জ্বর হয়েছে, আল্লাহ যেন তাতে বরকত না দেন’। একথা শুনে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, لَا تَسُبِّي الْحُمَّى، فَإِنَّهَا تُذْهِبُ خَطَايَا بَنِي آدَمَ، كَمَا يُذْهِبُ الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ ‘জ্বরকে গালি দিও না। কেননা জ্বর আদম সন্তানের পাপরাশি এমনভাবে মোচন করে দেয়, হাঁপর যেমন লোহার মরিচা দূরীভূত করে দেয়’।[7] সুতরাং মুমিনের কর্তব্য হ’ল রোগ ও মুছীবতকে গালমন্দ না করে, তা আল্লাহর নিকট সোপর্দ করা। যেমন ইয়াকূব (আঃ) বলেছিলেন, إِنَّمَا أَشْكُو بَثِّي وَحُزْنِي إِلَى اللهِ ‘আমি আমার দুঃখ-বেদনা আল্লাহর কাছেই নিবেদন করছি’ (ইউসুফ ১২/৮৬)।
রোগে-শোকে নিপতিত হওয়া নবী আইয়ূব (আঃ)-এর কাতর কণ্ঠের দো‘আ আল্লাহ পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন,
وَأَيُّوبَ إِذْ نَادَى رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنْتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ- فَاسْتَجَبْنَا لَهُ فَكَشَفْنَا مَا بِهِ مِنْ ضُرٍّ وَآتَيْنَاهُ أَهْلَهُ وَمِثْلَهُمْ مَعَهُمْ رَحْمَةً مِنْ عِنْدِنَا وَذِكْرَى لِلْعَابِدِينَ
‘আর (স্মরণ কর) আইয়ূবের কথা। যখন সে তার পালনকর্তাকে আহবান করে বলেছিল, আমি কষ্টে পড়েছি। আর তুমি দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তখন আমরা তার ডাকে সাড়া দিলাম। অতঃপর তার কষ্ট দূর করে দিলাম। আর তার পরিবার-পরিজনকে তার নিকটে ফিরিয়ে দিলাম এবং তাদের সাথে তাদের সমপরিমাণ আরও দিলাম আমাদের পক্ষ হ’তে দয়াপরবশে। আর এটা হ’ল ইবাদতকারীদের জন্য উপদেশ স্বরূপ’ (আম্বিয়া ২১/৮৩-৮৪)।
এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় রোগ মুক্তির প্রার্থনা করা ধৈর্যের পরিপন্থী নয়। কিন্তু রোগ-ব্যাধিতে ক্ষোভ, হতাশা ও অনুযোগ পেশ করা ধৈর্যের পরিপন্থী। আর আইয়ূব (আঃ) এ সকল কাজ থেকে মুক্ত ছিলেন। মহান আল্লাহ আমাদেরকে রোগ-ব্যাধিতে আইয়্যূব (আঃ)-এর মত ধৈর্যশীল হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!!
৫. মৃত্যু কামনা না করা :
রোগ-ব্যাধিতে মৃত্যু কামনা করা ঠিক নয়। আবু হুরায়ারা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لاَ يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ الـمَوْتَ: إِمَّا مُحْسِنًا فَلَعَلَّهُ أَنْ يَزْدَادَ خَيْرًا، وَإِمَّا مُسِيئًا فَلَعَلَّهُ أَنْ يَسْتَعْتِبَ، ‘অবশ্যই তোমাদের কেউ যেন কখনো মৃত্যু কামনা না করে। কেননা সে নেককার হ’লে আরো বেশী নেক কাজ করার সুযোগ পাবে। আর অসৎ লোক হ’লে (তওবার মাধ্যমে) আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রেযামন্দী হাছিলের সুযোগ পাবে’।[8] অপর বর্ণনায় তিনি বলেন,لاَ يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ الـمَوْتَ مِنْ ضُرٍّ أَصَابَهُ، فَإِنْ كَانَ لاَ بُدَّ فَاعِلًا، فَلْيَقُلْ: اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الحَيَاةُ خَيْرًا لِي، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الوَفَاةُ خَيْرًا لِي، ‘তোমাদের কেউ যেন কোন দুঃখ-কষ্টের কারণে মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা না করে। যদি এই ধরনের আকাঙ্ক্ষা করতেই হয়, তাহ’লে সে যেন বলে, (আল্লাহুম্মা আহয়ীনী মা কা-নাতিল হায়া-তু খায়রান লী, ওয়া তাওয়াফফানী ইযা কা-নাতিল অফা-তু খায়রান লী) অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! যতদিন আমার জীবন আমার জন্য কল্যাণকর হয়, ততদিন আমাকে জীবিত রাখ। আর আমার মৃত্যু যদি আমার জন্য কল্যাণকর হয়, তাহ’লে আমাকে মৃত্যু দান কর’।[9]
৬. আতঙ্কিত ও হতাশ না হওয়া :
রোগের কারণে হতাশায় মুহ্যমান হওয়া মুমিনের জন্য অনুচিত। বর্তমান করোনা মহামারীতে এমন অনেক রোগীর খবর জানা যায়, যারা করোনা পজিটিভ হওয়ার আতঙ্কে স্ট্রোক পর্যন্ত করেছেন। অথচ করোনায় আক্রান্ত হয়েও অনেকেই সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। করোনা না হয়েও আবার অনেকে মারা গেছেন। সুতরাং রোগের জন্য অতি আতঙ্কিত না হওয়া মুমিনের কর্তব্য। বরং তিনি সর্বদা ধৈর্যশীল এবং আল্লাহর প্রতি আস্থাশীল থাকবেন। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) কত চমৎকারই না বলেছেন,
كَمْ مِن صحيحٍ ماتَ مِن غيرِ عِلَّةٍ * وكَمْ مِن عَليلٍ عَاشَ حِينَاً مِن الدَهرِ
وكَمْ مِن فَتَى يُمسي ويُصبح ضاحكاً * وأكفانه في الغيب تُنسج وهو لا يدري
‘এমন বহু সুস্থ ব্যক্তি আছে, যে কোন রোগ ছাড়াই মৃত্যুবরণ করেছে। আবার বহু অসুস্থ ব্যক্তি অনেক দিন ধরে বেঁচে আছে। কত যুবক সকাল-বিকাল হেসে-খেলে সময় অতিবাহিত করছে, অথচ সে জানে না তার অগোচরে তার কাফনের কাপড় প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে’ (দীওয়ানে ইমাম শাফেঈ)।
হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘জেনে রাখা উচিৎ যে, হতাশা প্রকাশ করলে এবং ধৈর্যহারা হ’লে বিপদ ব্যক্তি কেবল শত্রুকেই খুশী করে, বন্ধুকে কষ্ট দেয়, তাঁর প্রভুকে ক্রোধান্বিত করে, শয়তানকে খুশী করে, প্রতিদান নষ্ট করে এবং স্বীয় নফসকে দুর্বল করে। আর বান্দা ছওয়াবের আশায় ছবর করার মাধ্যমে শয়তানকে লাঞ্ছিত ও ব্যর্থ করে, বন্ধুকে আনন্দিত করে এবং শত্রুকে কষ্ট দেয়’।
আরও জেনে রাখা উচিৎ যে, ছবরের মাধ্যমে যে স্বাদ ও আনন্দ অর্জিত হয়, তা হারিয়ে যাওয়া জিনিসটি ফেরত পাওয়ার আনন্দের চেয়ে অনেক গুণ বেশী। মুছীবতের বদলে তার জন্য ‘বায়তুল হামদ’ই যথেষ্ট, যা বিপদাপদে ‘ইন্না-লিল্লাহ্’ পাঠকারীর জন্য এবং সংকটকালীন মুহূর্তে তার প্রভুর প্রশংসা করার কারণে তার জন্য প্রস্ত্তত রাখা হয়েছে। সুতরাং হে বন্ধু! তুমি লক্ষ্য কর। কোন মুছীবতটি বেশী কষ্টকর? দুনিয়ার মুছীবত? না জান্নাতুল খুলদের বায়তুল হাম্দ ছুটে যাওয়ার মুছীবত?’।[10]
৭. আল্লাহর কাছে বেশী বেশী দো‘আ করা :
আরোগ্য লাভের জন্য রোগীর সবচেয়ে বড় কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহর কাছে বেশী বেশী দো‘আ করা। কারণ আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত পৃথিবীর কোন অভিজ্ঞ ডাক্তার বা ঔষধ কারও রোগ সারাতে পারে না। সেজন্য সর্বশ্রেষ্ঠ আরোগ্য দানকারীর নিকটেই সুস্থতা কামনা করতে হবে। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে রোগ মুক্তির জন্য আল্লাহর নিকটে দো‘আ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং স্বীয় অসুস্থতায় তিনি দো‘আ করেছেন। তিনি বলেন, اسْأَلُوا اللهَ العَفْوَ وَالعَافِيَةَ، فَإِنَّ أَحَدًا لَمْ يُعْطَ بَعْدَ اليَقِينِ خَيْرًا مِنَ العَافِيَةِ، ‘তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও সুস্থতা কামনা কর। কেননা ঈমানের পর সুস্বাস্থ্যের চেয়ে অধিক উত্তম বস্ত্ত কাউকে দান করা হয়নি’।[11]
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘ক্ষমার মাধ্যমে বান্দা আখেরাতের শাস্তি থেকে নিরাপত্তা লাভ করে এবং সুস্থতার (العَافِيَةَ) দ্বারা বান্দা দুনিয়াবী যাবতীয় আত্মিক ও শারীরিক ব্যাধি থেকে হেফাযতে থাকতে পারে’।[12]
রাসূল (ছাঃ) সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর নিকট সুস্থতা কামনা করে দো’আ করতেন,اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، اللَّهُمَّ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي، اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِي، وَآمِنْ رَوْعَاتِي، وَاحْفَظْنِيْ مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ، وَمِنْ خَلْفِي، وَعَنْ يَمِينِيْ، وَعَنْ شِمَالِيْ، وَمِنْ فَوْقِيْ، وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي، ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল আফওয়া ওয়াল ‘আ-ফিয়াতা ফিদ্ দুন্ইয়া ওয়াল আ-খিরাতি, আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকাল ‘আফ্ওয়া, ওয়াল ‘আ-ফিয়াতা ফী দ্বীনী ওয়া দুন্ইয়া-ইয়া ওয়া আহ্লী, ওয়া মা-লী। আল্ল-হুমাসতুর ‘আওর-তী, ওয়া আ-মিন রও‘আ-তী। ওয়াহফাযনী মিন বায়নি ইয়াদাইয়্যা ওয়ামিন খলফী, ওয়া ‘আন ইয়ামীনী, ওয়া ‘আন শিমা-লী, ওয়ামিন ফাওক্বী। ওয়া আ‘ঊযু বিকা আন উগতা-লা মিন তাহতী’।
অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের অনুগ্রহ ও নিরাপত্তা-সুস্থতা চাই। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদের স্বস্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমার দোষ-ত্রুটিগুলো গোপন রাখ এবং আমার ভয়কে শান্তি ও নিরাপত্তায় পরিণত কর। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে আমার সামনের দিক থেকে, পিছনের দিক থেকে, ডান দিক থেকে, বাম দিক থেকেও উপর থেকে হেফাযত কর। হে আল্লাহ! আমি মাটিতে ধ্বসে যাওয়া হ’তে তোমার কাছে আশ্রয় চাই’।[13]
রাসূল (ছাঃ) নিজের জন্য এবং অপরের জন্য সুস্থতা কামনা করে আল্লাহর নিকটে এই দো‘আ করতেন,أَذْهِبِ البَأسَ رَبَّ النَّاسِ، وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لاَ شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا- ‘হে মানুষের প্রতিপালক! তুমি রোগ দূর করে দাও এবং আরোগ্য দান কর। তুমিই তো আরোগ্যদানকারী, তোমার আরোগ্য ব্যতীত আর কোন আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দাও, যারপর কোন রোগ থাকে না’।[14]
আল্লাহর নিকটে দো‘আ করার পাশাপাশি নিজেই নিজেকে ঝাড়-ফুঁক করা যায়। যেমন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যখন শরীরের কোথাও ব্যথা অনুভূত হবে, তখন ব্যথার জায়গায় ডান হাত রেখে তিন বার ‘বিসমিল্লাহ’ এবং সাত বার এই দো‘আটি পড়বে-أَعُوْذُ بِعِزَّةِ اللهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ، ‘আ‘ঊযু বি ‘ঈয্যাতিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহী মিন শার্রি মা আজিদু ওয়া উহাযিরু’ (আমি আল্লাহর অসীম সম্মান ও তাঁর বিশাল ক্ষমতার অসীলায় আমার অনুভূত এই ব্যথার ক্ষতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি)’।[15]
৮. দান-ছাদাক্বা করা :
দান-ছাদাক্বার মাধ্যমেও রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়। বিশিষ্ট তাবেঈ বিদ্বান আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (১১৮-১৮১ হি.)-এর নিকটে জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল যে, গত ৭ বছর যাবৎ আমার হাঁটুতে একটি ফোঁড়া উঠে খুব কষ্ট দিচ্ছে। এ পর্যন্ত অনেক ডাক্তারের নিকটে বিভিন্ন চিকিৎসা গ্রহণ করেছি। কিন্তু কোন উপকার পাইনি। এখন আমি কি করতে পারি? আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ) বললেন, তুমি অমুক স্থানে একটা কূপ খনন কর। পানির জন্য সেখানকার মানুষ খুব কষ্ট পাচ্ছে। আশা করি ফোঁড়াটির মূল অংশ বের হয়ে যাবে এবং রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে। অতঃপর লোকটি তাই করল এবং আল্লাহর রহমতে সে আরোগ্য লাভ করল।[16] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, دَاوُوْا مَرْضَاكُمْ بِالصَّدَقَةِ ‘তোমরা ছাদাক্বার মাধ্যমে তোমাদের রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা কর’।[17] অতএব দান-ছাদাক্বা করলে পরকালে যেমন ছওয়াব মিলবে, ইহকালেও তেমনি উপকার পাওয়া যাবে। তাই সাধ্যানুযায়ী আমাদের সকলকে বেশী বেশী দান-ছাদাক্বা করা উচিত।
৯. চিকিৎসার ব্যবস্থা করা :
অসুস্থ হ’লে রোগীর অন্যতম করণীয় হ’ল চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আর এটা তাওয়াক্কুল ও ধৈর্যের পরিপন্থী নয়। কেননা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মধু, কালোজিরা, হিজামা প্রভৃতির মাধ্যমে নিজে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর উম্মতকে এই মর্মে নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, تَدَاوَوْا فَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لَمْ يَضَعْ دَاءً إِلَّا وَضَعَ لَهُ دَوَاءً، غَيْرَ دَاءٍ وَاحِدٍ الْهَرَمُ، ‘তোমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা কর। কেননা আল্লাহ একমাত্র বার্ধক্য ছাড়া সকল রোগের ঔষধ সৃষ্টি করেছেন’।[18] অর্থাৎ আল্লাহ রোগ সৃষ্টির পাশাপাশি সেই রোগের প্রতিষেধকও সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীতে এমন কোন কঠিন রোগ নেই, যার প্রতিষেধক আল্লাহ তৈরী করে রাখেননি। কিন্তু হয়ত সেই প্রতিষেধক আবিষ্কারে মানুষ অপারগ হয়েছে। সেকারণ দেখা যায় পূর্ববর্তী অনেক মরণঘাতী রোগও এখন সাধারণ রোগে পরিণত হয়েছে। আল্লাহর ইচ্ছায় বর্তমান যুগের করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধকও হয়ত একদিন আবিষ্কার হবে। তখন এই রোগকে মানুষ আগের মত ভয় করবে না। অনুরূপভাবে চিকিৎসার জন্য অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া এবং কোন হিতাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তির সহযোগিতা কামনা করাও দোষণীয় নয়। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন,أمَّا إخبارُ المريضِ صديقَهُ أو طبيبَهُ عن حالِهِ فلا بأس به اتفاقاً، ‘রোগী তার বন্ধু বা ডাক্তারের নিকটে রোগের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করতে পারে। সর্বসম্মতিক্রমে এতে কোন সমস্যা নেই’।[19] ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, إذا حَمِدَ المريضُ اللهَ، ثم أخبر بعِلَّتِهِ لم يكن شكوى منه، وإنْ أخبَرَ بها تبرُّمَاً وتسخُّطَاً كان شكوى منه- ‘রোগী যদি আল্লাহর প্রশংসা করে এবং অন্যের নিকটে তার রোগের অবস্থা বর্ণনা করে, তাহ’লে এটা তার পক্ষ থেকে অনুযোগ হিসাবে ধর্তব্য হবে না। কিন্তু সে যদি অসুস্থতার কারণে বিরক্তি ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে কাউকে তা অবগত করে, তাহ’লে সেটা তার পক্ষ থেকে অভিযোগ হিসাবে গণ্য হবে, (আর এই অভিযোগ অবশ্যই পরিত্যাজ্য)’।[20] অতএব আল্লাহর উপর ভরসা করে চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং বিশ্বাস রাখতে হবে যে, কোন উন্নত চিকিৎসা রোগ সারানোর কোন ক্ষমতা রাখে না। বরং ঔষধ-পথ্য, অস্ত্রোপচার সহ যাবতীয় চিকিৎসা উপকরণ আল্লাহর হুকুমেই আমাদের দেহে ক্রিয়াশীল হয়।
১০. হারাম বস্ত্ত দিয়ে চিকিৎসা না করা :
আরোগ্য লাভের জন্য নাপাক বস্ত্ত থেকে বিরত থাকা যরূরী। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الدَّوَاءِ الْخَبِيثِ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হারাম ও নাপাক জিনিস দ্বারা চিকিৎসা করতে নিষেধ করেছেন’।[21] তারেক ইবনু সুওয়াইদ আল-জু‘ফী (রাঃ) একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে মদ সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। তিনি তাকে নিষেধ করলেন অথবা মদ তৈরী করাকে খুব জঘন্য মনে করলেন। তখন ছাহাবী বললেন,إِنَّمَا أَصْنَعُهَا لِلدَّوَاءِ ‘আমি তো শুধু ঔষধ তৈরীর জন্য মদ প্রস্ত্তত করে থাকি’। রাসূল (ছাঃ) বললেন, إِنَّهُ لَيْسَ بِدَوَاءٍ، وَلَكِنَّهُ دَاءٌ ‘এটা তো (রোগ নিরাময়কারী) কোন ঔষধ নয়, বরং নিজেই এক ধরনের ব্যাধি’।[22]
তাছাড়া রোগ-ব্যাধির চিকিৎসা ও পরামর্শের জন্য কোন গণক বা জ্যোতিষীর নিকটে গমন করা হারাম। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ أَتَى عَرَّافًا فَسَأَلَهُ عَنْ شَيْءٍ، لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً ‘যে ব্যক্তি কোন গণকের নিকটে গমন করবে এবং তাকে কোন ব্যাপারে প্রশ্ন করবে, চল্লিলশ রাত তার কোন ছালাত কবুল হবে না’।[23] শায়খ ইবনু বায (রহঃ) বলেন, فلا يجوز للمريض أن يذهب إلى الكهنة الذين يدَّعون علم الغيب ليعرف منهم مرضه، كما لا يجوز أن يصدِّقهم فيما يخبرونه به، فإنهم يتكلمون رجماً بالغيب ‘যারা গায়েবী জ্ঞানের দাবী করে, সেইসব জ্যোতিষীর নিকটে রোগের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া রোগীর জন্য জায়েয নয়। অনুরূপভাবে তাদের বাতলানো কথা বিশ্বাস করাও বৈধ নয়। কেননা তারা আন্দাযে কথা বলে’।[24] অনুরূপভাবে তাবীয-কবযের মাধ্যমে চিকিৎসা করাও হারাম।[25]
রোগীর জন্য সুস্থ ব্যক্তির করণীয়
১. রোগীকে দেখতে যাওয়া ও তার সেবা করা :
রোগীকে দেখতে যাওয়া এবং রোগীর সেবা করা সুস্থ ব্যক্তির কর্তব্য এবং রোগীর অধিকার। কেননা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) এই ব্যাপারে মানব জাতিকে নির্দেশ দিয়েছেন। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, একজন মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের ছয়টি অধিকার রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হ’ল إذا مَرضَ فعُدْه ‘যখন সে অসুস্থ হবে, তখন তাকে দেখতে যাবে’।[26] অন্যত্র তিনি বলেন,عُودُوا الْمَرِيْضَ، وَاتَّبِعُوا الْجَنَازَةَ تُذَكِّرُكُمُ الْآخِرَةَ ‘তোমরা রোগীর সেবা কর এবং জানাযার ছালাতে অংশগ্রহণ কর, যা তোমাদেরকে আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে’।[27]
হাদীছে কুদসীতে এসেছে,إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ يَوْمَ القِيَامَةِ، يَا ابْنَ آدَمَ! مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِي، قَالَ: يَا رَبِّ! كَيْفَ أَعُودُكَ؟ وَأَنْتَ رَبُّ العَالَمِينَ، قَالَ: أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ عَبْدِي فُلاَناً مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ، أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ عُدْتَهُ لَوَجَدْتَنِي عِنْدَهُ، ‘ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম। কিন্তু তুমি আমার সেবা-শুশ্রূষা করনি। সে বলবে, হে রব! আমি কীভাবে তোমার সেবা করব, অথচ তুমি বিশ্ব চরাচরের অধিপতি? তখন আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল, কিন্তু তুমি তার সেবা করনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তার সেব-শুশ্রূষা করতে, তাহ’লে তার কাছেই আমাকে পেতে’।[28]
একবার আলী (রাঃ)-এর পুত্র হাসান (রাঃ) খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) তাকে দেখার জন্য আলী (রাঃ)-এর বাড়িতে গেলেন। আলী (রাঃ) তাকে বললেন, আপনি রোগীকে দেখতে এসেছেন নাকি অন্য কোন উদ্দেশ্যে এসেছেন? আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বললেন, আমি আপনার অসুস্থ ছেলে হাসানকে দেখতে এসেছি। তখন আলী (রাঃ) বললেন,مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَعُودُ مَرِيضًا إِلا خَرَجَ مَعَهُ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ، كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُ لَهُ، إِنْ كَانَ مُصْبِحًا حَتَّى يُمْسِيَ، وَكَانَ لَهُ خَرِيفٌ فِي الْجَنَّةِ، وَإِنْ كَانَ مُمْسِيًا خَرَجَ مَعَهُ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ، كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُ لَهُ حَتَّى يُصْبِحَ، وَكَانَ لَهُ خَرِيفٌ فِي الْجَنَّةِ ‘কোন মুসলিম ব্যক্তি সকাল বেলা কোন রোগীকে দেখতে গেলে সত্তর হাযার ফেরেশতা তার সাথে রওনা দেয়। প্রত্যেক ফেরেশতাই সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। উপরন্তু তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান তৈরী করা হয়। আর সে যদি সন্ধ্যা বেলা কোন রোগীকে দেখতে বের হয়, তাহ’লে সত্তর হাযার ফেরেশতা তার সাথে রওনা দেয়। প্রত্যেক ফেরেশতাই সকাল পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান বরাদ্দ করে রাখা হয়’।[29] শুধু মুসলিম রোগী নয়, বরং আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) অমুসলিম, কাফের রোগীদেরও দেখতে যেতেন।[30]
২. রোগীর জন্য ছাদাক্বা করা :
ছাদাক্বা এমন একটি আমল, যার মাধ্যমে আল্লাহর রাগ প্রশমিত হয় এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। নিজের এবং আত্মীয়-স্বজন বা প্রিয় মানুষদের আরোগ্য কামনা করার অন্যতম উপায় হ’ল ছাদাক্বা করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, دَاوُوْا مَرْضَاكُمْ بِالصَّدَقَةِ ‘তোমরা ছাদাক্বার মাধ্যমে তোমাদের রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা কর’।[31]
৩. অসহায় রোগীদের সহযোগিতা করা :
মানুষ এমনিতেই অপরের সহযোগিতা ছাড়া বাঁচতে পারে না। সে যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন সে আরো অসহায় হয়ে পড়ে। তাই অসহায়, নিঃস্ব, ইয়াতীম, গরীব, মিসকীন, বিধবা প্রমুখ মানুষদের রোগ-ব্যাধিতে সহযোগিতার হাত বাড়ানো প্রকৃত ঈমানের পরিচায়ক। তাকে ভাল মানের খাবার দিয়ে, ঔষধপত্র কিনে দিয়ে, সুচিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে এবং অর্থের জোগান দিয়ে বিবিধ উপায়ে অসহায় রোগীদের পাশে দাঁড়ানো যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ، يَسَّرَ اللهُ عَلَيْهِ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ‘যে ব্যক্তি কোন অসচ্ছল ব্যক্তির দুঃখ লাঘব করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহ তার সাথে সহজ ব্যবহার করবেন’।[32] সুতরাং ইহকালে ও পরকালে সফলতা লাভের জন্য অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করা যরূরী।
৪. রোগীর জন্য দো‘আ করা ও ঝাড়-ফুঁক করা :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন কোন রোগীকে দেখতে যেতেন, তখন তার জন্য কল্যাণের দো‘আ করতেন। মা আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন কোন রোগীকে দেখতে যেতেন কিংবা তাঁর নিকটে কোন রোগীকে আনা হ’ত, তখন তিনি বলতেন,أَذْهِبِ البَأسَ رَبَّ النَّاسِ، وَاشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لاَ شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا، ‘কষ্ট দূর করে দাও, হে মানুষের রব! আরোগ্য দান কর, তুমিই একমাত্র আরোগ্য দানকারী। তোমার আরোগ্য ছাড়া অন্য কোন আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দান কর, যা সমান্যতম রোগকেও অবশিষ্ট রাখে না’।[33] তিনি আরোও বলতেন, لاَ بَأْسَ طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللهُ، ‘ভয় নেই। আল্লাহ চান তো তুমি খুব শীঘ্রই ভালো হয়ে যাবে’।[34]
আবার কখনো কখনো তিনি রোগীকে ঝাড়-ফুঁক করতেন এবং ছাহাবায়ে কেরামকে ঝাড়-ফুঁক করার নির্দেশ দিতেন। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, কোন মুসলিম যখন এমন রোগীকে দেখতে যায়, যার মৃত্যুক্ষণ ঘনিয়ে আসেনি, তাহ’লে সে যেন রোগীর জন্য এই দো‘আটি সাত বার পড়ে,أَسْأَلُ اللهَ الْعَظِيمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ أَنْ يَشْفِيَكَ، ‘আমি মহামহিম রব ও আরশের অধিপধির নিকট দো‘আ করছি, তিনি যেন তোমাকে রোগ থেকে সুস্থতা দান করেন’। তাহ’লে নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে সেই রোগ থেকে আরোগ্য দান করবেন’।[35] এছাড়া পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ সমূহে বিভিন্ন রোগের ঝাড়-ফুঁক করার অনেক দো‘আ বর্ণিত হয়েছে।
৫. চিকিৎসার জন্য সুপরামর্শ দেওয়া :
রোগ থেকে আরোগ্য লাভের জন্য চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই একজন সুস্থ ব্যক্তির কর্তব্য হ’ল অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য তাকে সুপরামর্শ দেওয়া। কিভাবে, কোন হাসপাতালে বা মেডিকেলে, কোন অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গেলে, কোন ঔষধ বা খাবার খেলে অতিদ্রুত রোগ সেরে যাবে, কোন খাবারে তার রোগ বৃদ্ধি পাবে এই ব্যাপারে রোগীকে পরামর্শ দেওয়া।
উম্মুল মুনযির আল-আনছারিয়্যাহ (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আলী (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে আমার নিকটে এলেন। আলী রোগ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন মাত্র, কিন্তু দুর্বলতা এখনো কাটেনি। আমাদের ঘরে খেজুর গুচ্ছ লটকানো ছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তা খেতে শুরু করলেন। আলীও খেতে উদ্যোগী হ’লেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আলীকে বললেন, হে আলী! থাম থাম, তুমি এগুলো খেয়ো না। কারণ তুমি এখনো অসুস্থতাজনিত দুর্বল। বর্ণনাকারিণী বলেন, তখন আলী (রাঃ) বসে গেলেন এবং রাসূল (ছাঃ) খেতে থাকলেন। আর আমি তাদের জন্য শালগম ও বার্লি দিয়ে খাদ্য তৈরী করে আনলাম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,يَا عَلِيُّ، مِنْ هَذَا فَأَصِبْ، فَإِنَّهُ أَوْفَقُ لَكَ، ‘হে আলী! এটা খাও, এটা তোমার জন্য উপকারী’।[36] অনুরূপভাবে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধিতে রাসূল (ছাঃ)-এর শেখানো দো‘আগুলো রোগীকে শিখিয়ে দেওয়া অথবা স্মরণ করিয়ে দেওয়াও সুস্থ ব্যক্তির অন্যতম কর্তব্য।
পরিশেষে রোগী ও সুস্থ ব্যক্তির করণীয় সঠিকভাবে আয়ত্বে এনে সে মোতাবেক আমল করলে উভয়েই ইহকাল ও পরকালে কামিয়াবী হাছিল করবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সকলকে কুরআন ও হাদীছ অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দিন-আমীন!
[1]. বুখারী হা/৫৭৭০; মুসলিম হা/২২২০; মিশকাত হা/৪৫৭০।
[2]. বুখারী হা/৫৭৭১; মুসলিম হা/ ২২২১।
[3]. বুখারী হা/৫৭০৭; মিশকাত হা/৪৫৭৭।
[4]. মুসলিম হা/২৬৫৩; মিশকাত হা/৭৯।
[5]. যাদুল মা‘আদ ৪/১৭৪।
[6]. বুখারী হা/৫৬৫২; মুসলিম হা/২৫৭২।
[7]. মুসলিম হা/২৫৭৫; আদাবুল মুফরাদ হা/৫১৬।
[8]. বুখারী হা/৫৬৭৩; মিশকাত হা/১৫৯৮।
[9]. মুসলিম হা/ ২৬৮২; মিশকাত হা/১৫৯৯।
[10]. যাদুল মা‘আদ ৪/ ১৭৬।
[11]. তিরমিযী হা/ ৩৫৫৮; মিশকাত হা/২৪৮৯; ছহীহ হাদীছ।
[12]. ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ৪/১৯৭।
[13]. আবূদাঊদ হা/৫১৭৪; ইবনু মাজাহ হা/৩৮৭১; মিশকাত হা/২৩৯৭; হাদীছ ছহীহ।
[14]. বুখারী হা/৫৭৫০; মুসলিম হা/২১৯১; আবূদাঊদ হা/৩৮৮৩।
[15]. ইবনু মাজাহ হা/৩৫২২; মিশকাত হা/১৫৩৩, হাদীছ ছহীহ।
[16]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান ৫/৬৯; যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৭/৩৮৩।
[17]. ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩৫৮, সনদ হাসান।
[18]. আবূদাঊদ হা/৩৮৫৫; তিরমিযী হা/২০৩৮; ছহীহুল জামে‘ হা/২৯৩০।
[19]. ফাৎহুল বারী ১০/১২৪।
[20]. ‘উদ্দাতুছ ছাবেরীন, পৃ:১০৭।
[21]. আহমাদ হা/৮০৪৮; আবূদাঊদ হা/৩৮৭০; তিরমিযী হা/২০৪৫; ইবনু মাজাহ ৩৪৫৯; মিশকাত হা/৪৫৩৯; ছহীহ হাদীছ।
[22]. মুসলিম হা/১৯৮৪; মিশকাত হা/৩৬৪২।
[23]. মুসলিম হা/২২৩০; মিশকাত হা/৪৫৯৫।
[24]. মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৩/২৭৪।
[25]. তিরমিযী হা/২০৭২; মিশকাত হা/৪৫৫৬, সনদ হাসান।
[26]. মুসলিম হা/২১৬২; মিশকাত হা/১৫২৫।
[27]. আহমাদ হা/ ১১২৭০; ছহীহুল জামে‘ হা/৪১০৯; সনদ ছহীহ।
[28]. মুসলিম হা/২৫৬৯; আদাবুল মুফরাদ হা/৫১৯; মিশকাত হা/১৫২৮।
[29]. আবূদাঊদ হা/৩০৯৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৭১৭; ছহীহাহ হা/১৩৬৭।
[30]. বুখারী হা/১৩৫৬; আবূদাঊদ হা/৩০৯৫।
[31]. ছহীহুল জামে‘ হা/৩৩৫৮, সনদ হাসান।
[32]. ইবনু মাজাহ হা/২৪১৭, সনদ ছহীহ।
[33]. বুখারী হা/৬৫৭৫; মুসলিম হা/ ২১৯১।
[34]. বুখারী হা/৩৬১৬; মিশকাত হা/১৫২৯।
[35]. আবূদাঊদ হা/৩১০৬; তিরমিযী হা/২০৮৩; মিশকাত হা/১৫৫৩; হাদীছ ছহীহ।
[36]. তিরমিযী হা/২০৩৭; মিশকাত হা/৪২১৬; সনদ হাসান।